০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ ইং. সংযোগ নিউজ। ঢাকা : কারাখানার গেটে টানানো নোটিশস কালে ঘুম থেকে উঠেই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য দলে দলে কারখানার দিকে ছুটছেন শ্রমিকরা। কারখানার সামনে আসার পর জানতে পারেন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। প্রতিটি গার্মেন্টস কারখানার গেটে মাইকিং করে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কারখানা বন্ধ রয়েছে। তাই তাদেরকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কোথাও আবার টানানো হয়েছে নোটিশ। এ অবস্থায় কাজে যোগ দিতে না পেরে কিছু সময় অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে যান শ্রমিকরা। রবিবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কিছু গার্মেন্টস ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে গণপরিবহন চলাচলে। কিন্তু এরপরেও হঠাৎ করে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নেয় মালিকরা। এ কারণেই শনিবার (৪ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকায় এসেছেন। এ অবস্থায় তীব্র সমালোচনা মুখে পড়ে ফের কারখানা বন্ধ রাখান আহ্বান জানায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
কাজের যোগ দিতে আসা শ্রমিকদের ফিরে যেতে বলছে পুলিশ
শ্রমিকরা জানান, ২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর তারা গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) তাদেরকে জানানো হয় রবিবার থেকে কারখানা খোলা। যারা কাজে যোগ দেবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাকরি হারানো ভয়ে তারা দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে করে ঢাকায় ফিরেছেন। সকালে কারখানায় গেলে জানিয়ে দেওয়া হয় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ।
সকালে মিরপুর ১ নম্বরের ব্যাবিলন গার্মেন্টস লিমিটেডের সামেন গিয়ে দেখা গেছে কারখানার পক্ষ থেকে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘এই মর্মে ব্যাবিলন গার্মেন্টস লিমিটেডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে, কারখানার সব কার্যক্রম আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আগামী ১২ এপ্রিল কারখানার সব কার্যক্রম যথারীতি খোলা থাকবে। সবাইকে খেলার তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে গার্মেন্টসের সিনিয়র অফিসার (অ্যাডমিন) মাকসুদা খাতুন বলেন, ‘আমি সকালে এসে জেনেছি গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে। তাই আমরা এখন শ্রমিকদেরকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য বলছি। যাতে তারা নিরাপদে থাকেন। আগামী ১২ এপ্রিল ফ্যাক্টরি খুলবে। ওই দিন তাদেরকে কাজে যোগ দিতে বলেছি। কর্তৃপক্ষের আদেশে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘কাজটা খুবই অমানবিক হয়েছে। শ্রমিকদেরকে ঘরে ফেরাতে হলে আমাদেরকে এখন অনেক কঠোর হতে হবে। তখন সবাই বলবে আমারা শ্রমিকরদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করি।’
একই চিত্র দেখা গেছে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একাধিক গার্মেন্টসে। সেখানে গার্মেন্টস বন্ধ বলে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজে যোগ দিতে আসা শ্রমিকদের ফিরে যেতে হয়েছে। তবে এসব কারখানার সামনে শ্রমিকদের জন্য হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে আসমা আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর আমরা বাড়িতে চলে যাই। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ফোন দিয়ে জানানো হয় কারখানা খোলা। কাজে যোগ না দিলে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই জীবন ঝুঁকি নিয়ে আবার ঢাকায় চলে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। রাস্তায় কোনও বাস নেই। যানবাহনও নেই। দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে পরে একটি ট্রাকে কয়েকজন মিলে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে হেঁটে মিরপুর এসেছি। সকালে কারখানায় গিয়ে দেখি বন্ধ। তাহলে কেন আমাদেরকে এতো কষ্ট দেওয়া হলো। আমরা এখন কোথায় থেকে খাবো? আবার বাড়িতেও তো ফিরে যেতে পারবো না।’
সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানা মালিকদের পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও মাইকিং করে বন্ধের ঘোষণা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরদের ১২ তারিখে এসে বেতন নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। ওই পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হচ্ছে।
মাসুদা আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘শনিবার কারখানার সুপারভাইজারের ফোন পেয়ে হেঁটে নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসেছি। এখন গোট পা ফুলে গেছে। কোনও যানবাহন পাইনি। এখন শুনি কারখানা বন্ধ। তাহলে কেন আমাদেরকে এই ভোগান্তি দেওয়া হয়েছে? আমরা এখন কোথায় যাবো? যদি কারখানা বন্ধ রাখা হয় তাহলে আমাদেরকে নিরাপদ যানবাহন দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হোক। এভাবে ডেকে এসে ফিরিয়ে দেওয়ার তো কোনও মানে হয় না।’