যুক্তরাজ্যের পর তারেকের গন্তব্য কোথায় ?
সংযোগ নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার ৪টি শর্তই ভঙ্গ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেককে ফেরাতে ইতিমধ্যে নানান কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যাতে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে যে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। এরইমধ্যে তাকে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য সরকার নিজ দেশে রেখে আইনবহিভূর্ত আশ্রয় দিয়ে কোনো সমালোচনার মুখোমুখি হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হলে তার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে?
ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটিশ সরকার এই মুহূর্তে নানা অপবাদে কলঙ্কিত তারেক জিয়াকে সেদেশে রাখার ঝুঁকি নেবে না বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছাড়লেই যে তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফিরবেন বা তাকে ফিরতে বাধ্য করা হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্রিটিশ প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত কোনো বিদেশির জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় যদি বাতিল করা হয়, তখন তার স্বদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার অভিপ্রায় আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই আশ্রয় গ্রহণকারীকে যদি তৃতীয় কোনো দেশ নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং আশ্রয়কারীর যদি তাতে সম্মতি থাকে, তাহলে তাকে ওই তৃতীয় দেশেই পাঠানো হয়। জোর করে নিজ দেশে প্রেরণ করা ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। তারেক জিয়া সম্ভবত আইনের এই সুযোগটি নেবেন। যুক্তরাজ্য সরকার যখন তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে, তখন তৃতীয় কোনো দেশ যদি তাকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়, তাহলে তারেক জিয়ার দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত হবে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য যদি তারেক জিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় তবুও তারেক দেশে ফেরার ঝুঁকি নেবে না। প্রশ্ন হলো, কোথায় যাবে ইন্টারপোলের খাতায় ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত তারেক জিয়া? যেহেতু তারেক রহমান বর্তমানে দুটি মামলায় দণ্ডিত, পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতাকে উস্কানি ও মদদ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ফলে তারেক জিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেবে না, এটা নিশ্চিত। কারণ, তারেক রহমানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যুক্তরাষ্টও বিষদভাবে অবহিত। এমনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের কোনদিন ভিসা দেবেন না, সেই তালিকায় তারেক রহমানের নামও রয়েছে। এফবিআইয়ের তালিকায় তারেক ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
অন্যদিকে দুই মামলায় দণ্ডিত হবার কারণে ইউরোপের কোনো দেশ তাকে নিতে পারবে না। যুক্তরাজ্যে তার ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বাতিল হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে তারেক জিয়াকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিতে পারবে না।
যদিও তারেক রহমানের পছন্দের দেশ সিঙ্গাপুর। কিন্তু সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশন আইন ২০০৮ সালে অনেক কড়াকড়ি হয়েছে। এখন অন্যদেশে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে দীর্ঘমেয়াদি প্রবেশাধিকার পায় না। অপরদিকে মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিপুল ব্যবসা এবং সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকায় প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানও মালয়েশিয়ায় থাকতে পারেননি।
তবে কী পাকিস্তানে আশ্রয় নেবেন তারেক রহমান? যদিও তারেক রহমানকে আশ্রয় দিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী পাকিস্তান। তাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের ‘শেষ প্রতিনিধি’ বলা হয়। কিন্তু তারেক জিয়া পাকিস্তানে গেলে তার রাজনৈতিক আদর্শ এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যাবে, সে কারণেই তারেক পাকিস্তান যেতে আগ্রহী হবে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে তারেক জিয়ার বিপুল সম্পদ রয়েছে। সম্পদ আছে কাতারেও।
তবে, তারেক জিয়া ব্যক্তিগতভাবে সৌদি আরব যেতে আগ্রহী নন। ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকাদর জিয়া পরিবারকে সৌদি আরব পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তারেকের আপত্তির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দর থেকে বেগম জিয়ার ১২২টি স্যুটকেস ফেরত আনতে হয়। এখন তারেক জিয়ার সামনে একটি বিকল্প আছে সেটা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউএইর দুবাই এবং শারজায় তারেক জিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে।
দুবাই ট্যাক্স হ্যাভেন হওয়ার কারণে তারেক লন্ডনের চেয়ে এখানেই থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু মেয়ে জাইমার লেখাপড়ার জন্যই মূলত তারেক লন্ডনে ছিলেন। দুবাইতে কালো টাকা, আন্তর্জাতিক চোরাচালানের অবৈধ অর্থ এবং সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য। দাউদ ইব্রাহিমের মতো বিশ্বের সেরা ডনরা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ইউএই আইন অনুযায়ী, ওই দেশে কোনো অপরাধ না করলে আপনি যত বড় অপরাধীই হন না কেন, আপনাকে কেউ বাধা দেবে না। তাই তারেক জিয়ার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ‘দুবাই’ স্বর্গরাজ্য। যুক্তরাজ্য থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর তারেকের পরবর্তী ঠিকানা কোথায় হবে, দুবাই নাকি অন্য কোনো দেশ? নাকি শেখ হাসিনার অন্যসব সাহসী সিদ্ধান্তের মতো তারেক জিয়াকেও তিনি দেশে ফেরাতে পারবেন? এখন তাই’ই দেখার বিষয়।